অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে যাওয়ার কারণ জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চান? যদি তাই হয় তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে যাওয়ার কারণ জানানো হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ও লেখক এর বিশেষ মন্তব্য পেশ করা হয়েছে। তাই দেরি না করে মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন।
অনেকের মনে অনেক রকম প্রশ্ন ঘুরপাক করছে যেমন : ডায়েট অনুযায়ী খাবার খাচ্ছি তাও কেন শরীরে রোগাটে ভাব আসছে না? জিমে যাচ্ছি ব্যায়াম করছি তাও কেন উপকারিতা মিলছে না? আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন এই পোস্টে। আশা করছি পোস্টটি পড়ে আপনি বেশ উপকৃত হবেন।

পোষ্ট সূচিপত্রঃ অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে যাওয়ার কারণ জেনে নিন

ভূমিকা

দৈনন্দিন জীবনে আমাদের একটি সমস্যা প্রায় বেশিরভাগ মানুষেরই দেখা দিয়েছে তা হলো অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে যাওয়া। এক কথায়, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে যাওয়া সারা বিশ্বে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে গেলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক।

তাই সুস্থ থাকতে হলে অতিরিক্ত মোটা নয়, অতিরিক্ত রোগা নয় স্বাভাবিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। স্বাভাবিক ভাবে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক প্রতিটি মানুষের শরীরের জন্য ওজনের তুলনায় কিছুটা পরিমাণ মেদ প্রয়োজন। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা আমাদের শরীরের জন্য কতটুকু ওজন প্রয়োজন। 

আপনি জানেন কি? অতিরিক্ত ওজনের কারণে সারা বিশ্বে প্রায় এক বছরের মধ্যে ২৮ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যার শেষ পরিণতি হচ্ছে মৃত্যু। তবে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে যাওয়ার কারণ বেশ কিছু ওষুধ সেবনও হতে পারে।

অতিরিক্ত ওজনে যে সব রোগের ঝুঁকির সম্ভাবনা বেশি তা নিম্নে দেওয়া হলো:
  • ক্যান্সার
  • লিভারের সমস্যা
  • হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট
  • ডায়াবেটিস
  • হৃদরোগ
  • বিষন্নতা
আপনি যেমন মোটা থেকে রোগা হওয়ার সমাধান খুঁজছেন ঠিক তেমনি মোটা হওয়ারও কিছু কারণ রয়েছে সেগুলো আগে জেনে নিন।

হরমোনের তারতম্য

অনেক মহিলারাই আছেন হঠাৎ করে দুই এক বছরের মধ্যে একটু বেশি মোটা হয়ে যাচ্ছেন যার অন্যতম কারণ হচ্ছে, ইস্ট্রোজেনের নিঃসরণ কমতে থাকা। ফলে মহিলাদের তলপেটে মেদ জমে যায় এবং ওজন বৃদ্ধি হয়। 
এছাড়া অনেক মহিলাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে আবার অনেক মহিলা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম আছে। যা হরমোনে তারতম্যের কারণে মোটা হয়ে যাচ্ছেন। যদি আপনার শরীরে এই সমস্যাগুলো থেকে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।

ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

ভয়াবহ একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়। ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জন্য মানবদেহে ওজন বৃদ্ধি পায়। যেমন কিছু ওষুধ:
  • দুশ্চিন্তা দূর করার ওষুধ
  • একজিমা রোগের ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধ
  • হাঁপানি রোগের ওষুধ
  • গর্ভনিরোধক ঔষধ
এছাড়াও আরো অনেক প্রকার ওষুধ রয়েছে যা সেবনে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় মানব দেহ মুটিয়ে যায় এবং ওজন বৃদ্ধি পায়।

অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস

অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। আমরা অনেকেই এই ভুলটা করে থাকি যে, খাবারে তালিকা থেকে সকালের নাস্তা বাদ দেয় রোগা হওয়ার আশায়। এতে উল্টো বিপরীত হয়ে যায়। উপকার হওয়ার পরিবর্তে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। 

হয়তো অনেকেই জানেন না, সকালের নাস্তা বাদ দিলে শরীরে রোগাটে ভাব আসে না বা ওজন কমে না বরং তার পরিবর্তে শরীরে অতিরিক্ত মেদ বৃদ্ধি পায়। এটি হয়ে থাকে সাধারণত, খাবার না খাওয়ার কারণে দেহের মেটাবলিজম কমে যায় এবং অতিরিক্ত মেদ বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করে। 
তাই অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার খেতে হবে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন পকেট জাত খাবার, ফাস্টফুড, চিপস, কোল্ড ড্রিংকস ইত্যাদি নানা প্রকার খাবারের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ওজন বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া। যা আমাদের খাবারে তালিকা থেকে পরিহার করতে হবে।

আবার আমরা অনেকেই তাড়াহুড়ো করে খাবার খেয়ে ফেলি যার ফলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হয়ে যায়। এতে করে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে এবং ওজন বৃদ্ধি পায়।

অনিয়মিত ঘুম

বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় দেখা দিয়েছে, যারা ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অনিয়মিত ঘুম বা ঘুমের ব্যাঘাত হওয়ার কারণে মানুষের শারীরিক মুড বা খাদ্য অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটে। যা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক।

জীবনযাত্রায় অলসতা

অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে যাওয়ার জন্য শারীরিক ও মানসিক অলসতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আপনি আপনার প্রতিকূল পরিবেশে বা আপনার বাসার আশেপাশে একটু খেয়াল রাখলে দেখতে পাবেন যে, যারা ব্যস্ততার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে বা অতিরিক্ত পরিশ্রম করছে তারা কিন্তু অন্যদের থেকে একটু আলাদা অর্থাৎ তাদের শারীরিক গঠন ওজন অন্যান্যদের থেকে একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। 
অলস ব্যক্তিদের পরিশ্রম না হওয়ার কারণে খাদ্যের মাধ্যমে গৃহীত ক্যালরির খরচ হয় না বরং তা জমতে থাকে এবং ওজন অতিরিক্ত পরিমাণে বাড়তে থাকে। একটু চোখ কান খোলা রাখলে দেখতে পাবেন যারা সাধারণত বাসায় বসে ডেস্কে কাজ করে থাকে তাদের শারীরিক পরিশ্রম হয় না। যার কারণে তারা মোটা হয়ে যায়। 

আবার অধিকাংশ সরকারি চাকরিজীবীরাও রিটায়ার্ড হওয়ার পর হঠাৎ করেই মোটা হয়ে যায়। তাদেরও শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ার কারণে এটি হয়ে থাকে। তাই পরিশ্রম শরীরের জন্য ভালো।

প্রেগনেন্সি বা মাতৃত্ব

মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে যাওয়ার আরো একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রেগনেন্সি বা মাতৃত্ব। সাধারণত মায়েরা শিশুর কথা ভেবে বেশি খাবার খায়। যা ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য কর। তবে প্রেগনেন্ট বা মাতৃত্বকালীন সময়ে এ নিয়ে নূন্যতম ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সময়ের সাথে সাথে এটি ঠিক হয়ে যায়। তবে বেশিরভাগ মেয়েদের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল নেওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধি হয়ে থাকে।

শরীরে পানি জমা

হঠাৎ করেই আমরা দেখতে পাই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন হতে পারে, হাত, পা, গলা, মুখ, পেট ইত্যাদি জায়গায় পানি জমে থাকে। এই রোগটি 'ইডিমা' নামে পরিচিত। এর কারণে ওজন বৃদ্ধি হয়ে থাকে। সাধারণত এই সমস্যাটি কিডনি, লিভার ও হার্টের সমস্যার জন্য হয়ে থাকে।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবকিছুই আপডেট হয়েছে। তাই আমাদের এই সমস্যাটি ও তাদের তালিকায় রয়েছ। এখন অতিরিক্ত মেদ ছেটে ফেলা যায় অস্ত্রোপচার এর মাধ্যমে। তবে আমার মনে হয় সার্জন বা বিভিন্ন ওষুধের সাহায্য নিয়ে মেদ অথবা চর্বি কমানোর চেয়ে ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে কমানোই ভালো। আর সে বিষয়েও চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদ আপনাকে পরামর্শ দিতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে যাওয়া নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সব সময় মনে বল রাখবে। মানবজাতির জীবনে ইচ্ছাশক্তি চেয়ে বড় আর কিছু নেই। সেই শক্তিকে কাজে লাগান। কোনভাবেই হতাশ হয়ে পড়বেন না। মনে রাখবেন, বিশাল পৃথিবীতে ও সুন্দর প্রকৃতিতে আপনি নিজেই নিজের জন্য। তাই চরম ব্যস্ততা থাকলেও নিজের মন ও শরীরকে সময় দিন।

আপনি যা কিছুই করেন না কেনো তার উৎকর্ষতা নির্ভর করে আপনার শরীর ও মন ভালো থাকার উপর। তাই শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা আপনার জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রয়োজনে ওজন নিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চিকিৎসক এবং ডায়াটিশিয়ান এর পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন