ব্রেন টিউমারের ধরন, লক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া
প্রিয় পাঠক, আপনি কি শিশুদের ব্রেন টিউমারের ধরন, লক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া
সম্পর্কে জানতে চান? শিশুদের ব্রেন টিউমার সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা নেই? যদি তাই
হয় তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে শিশুদের ব্রেন টিউমারের
ধরন, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানানো হয়েছে। এছাড়া ব্রেন টিউমার সম্পর্কে আরো
অজানা তথ্য দেওয়া রয়েছে এই পোস্টে।
বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো
পোস্টটি পড়ে আপনার মনে জমে থাকা নানা অজানা প্রশ্নের উত্তরগুলো পেয়ে যাবেন এবং
আপনি বেশ উপকৃত হবেন, ধন্যবাদ।
ব্রেন টিউমার এর ভূমিকা
ব্রেন টিউমারের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। কিছু ব্রেন টিউমার ক্যান্সার মুক্ত আবার কিছু
ব্রেন টিউমার ক্যান্সার প্রবণ হয়ে থাকে। প্রাথমিক ব্রেন টিউমার মস্তিষ্কে হয়ে
থাকে। ব্রেন টিউমারের চিকিৎসার বিকল্পগুলি ব্রেন টিউমারের ধরন, আকার ও অবস্থানের
উপর নির্ভর করে থাকে।
ছোট বাচ্চাদের ব্রেন টিউমার হওয়ার লক্ষণ
ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ব্রেন টিউমারের লক্ষণ দেখা দিলে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা
উচিত সেগুলো নিম্নে দেওয়া হলো:
- মাথা ব্যাথা করা
- খিচুনি দেওয়া
- ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হওয়া
- মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি পাওয়া
- ভারসাম্যের সমস্যা দেখা দেওয়া
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- অনিদ্রা বা ঘুম না হওয়া
- দেখতে শুনতে ও কথা বলতে সমস্যা হওয়া
ব্রেন টিউমারের লক্ষণগুলোর বিবরণ
মাথা ব্যাথা করা: ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত শিশুরা প্রথমে মাথা ব্যথা অনুভব
করবে। যদিও বা অনেক শিশুর মাথাব্যথা সমস্যা থেকে থাকে তাই বলে সকলেরই ব্রেন
টিউমার হয় না। ব্রেন টিউমারের শিশুদের মাথাব্যথা লক্ষণ হচ্ছে, সকালের দিকে মাথা
ব্যথা করবে। এছাড়াও যখন শুয়ে থাকবে তখন মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাবে এবং মাথা ব্যথা
অর্থাৎ টিউমারের ব্যথা আরো বাড়তে থাকবে।
খিচুনি দেওয়া: টিউমার যদি মস্তিষ্কের পিছনে থেকে থাকে তবে এর কারণে
খিচুনি দেখা দিতে পারে। টিউমার বা অন্যান্য কোন সমস্যার জন্য খিচুনি হতে পারে।
তাই আপনার সন্তানের খিঁচুনি দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নেন এবং খিচুনি
পরীক্ষা করুন।
ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হওয়া: প্রথমত, স্বাভাবিকভাবে শিশুর ব্যক্তিত্বের
পরিবর্তন হয় তার ছেলেবেলা থেকে গড়ে ওঠার উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে। তবে
মস্তিষ্কে টিউমারের কারণে এটির পরিবর্তন ও ঘটতে পারে। যদি আপনার সন্তানের মেজাজ
পরিবর্তন দেখা দেয় এবং সেটি গুরুতর আকার ধারণ করে তবে এটি এড়িয়ে না চলে খুব
শীঘ্রই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখান।
মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি পাওয়া: শিশুদের ছোট অবস্থায় তাদের মাথার খুলির
হাড়গুলি অত্যন্ত নরম ও মোলায়েম হয়ে থাকে। আর ব্রেন টিউমারের কারণে শিশুদের
মাথার আকার অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। যদি আপনার শিশুর মাথার আকার
অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় তবে এ বিষয়ে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন।
ভারসাম্যের সমস্যা দেখা দেওয়া: টিউমার যদি ব্রেন স্টেমের কাছে থেকে থাকে
তবে এটি ভারসাম্যের সমস্যা তৈরি করতে সাহায্য করে। যদি আপনার শিশুর ভারসাম্যতা
বজায় রাখতে অসুবিধা হয় তবে সেটি মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। ব্রেন টিউমার যদিও না
থাকে আপনার শিশুর তবুও এমনটা কেন হচ্ছে তা নির্ধারণ করতে পারবে ডাক্তার।
বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া: ব্রেন টিউমারের সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে বমি বমি ভাব
বা বমি হওয়া। ব্রেন টিউমারের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ স্বাভাবিকভাবে দেখা দেয় এবং
মস্তিষ্কের উপরে চাপ বাড়ায়। আপনার সন্তানের যদি বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে
এবং এই লক্ষণটি ক্রমাগত দেখা দেয় তবে শিশুটিকে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান।
অনিদ্রা বা ঘুম না হওয়া: অবশ্যই ভালো ঘুম শিশুদেরকে প্রাণবন্ত রাখতে
সাহায্য করে। যদিও বা অনেক শিশুরাই আছে একটু কম ঘুমায় ও চঞ্চল প্রকৃতির হয়।
এইসব শিশুদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হলেও এটি যদি অতিরিক্ত মাত্রা ধারণ করে বা অলসতা
বোধ করে তাহলে বুঝতে হবে সেই শিশুটির মধ্যে কোন সমস্যা রয়েছে। আর তা নিশ্চিত
করতে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
দেখতে শুনতে ও কথা বলতে সমস্যা হওয়া: ব্রেন টিউমার দেখা, শোনা এবং কথা
বলার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। আবার কোনো শিশুদের ক্ষেত্রে ব্রেন টিউমার
না থাকলেও এসব সমস্যা দেখা দেয়। তাই শিশুর দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং কথা বলায়
খেয়াল রাখতে হবে সেটি স্বাভাবিক কি না। মনে রাখবেন, রোগীর শারীরিক অসুবিধা
টিউমারের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে থাকে।
বড়দের ব্রেন টিউমারের অন্যান্য উপসর্গ
ব্রেন টিউমারের লক্ষণ ঠিক কেমন হয় এই বিষয়টি রোগী ভেদে একেক রকম হয়। চলো নিচে
জেনে নেই বড়দের ব্রেন টিউমারের অন্যান্য উপসর্গ গুলো:
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
- ক্রমাগত বমি হওয়া।
- চোখে ঝাপসা ঝাপসা দেখা।
- মুখের স্বাদ চলে যাওয়া।
- মৃগী রোগে আক্রান্ত হওয়া।
- থেকে থেকে শরীর কাঁপুনি দেওয়া।
- চলতে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যাওয়া।
- শরীরের ভারসাম্যতা রক্ষা করতে না পারা।
- যেকোনো কথা সহজে বুঝতে না পারা।
ব্রেন টিউমারের ধরন
সাধারণত ব্রেন টিউমার দুই ধরনের হয়ে থাকে।
- বেনাইন টিউমার, যা ক্যানসার নয়।
- ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, যা ক্যানসার জাতীয় টিউমার।
আরো পড়ুনঃ পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
ম্যালিগন্যান্ট ক্যানসার জাতীয় টিউমার আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন:
- প্রাথমিক ম্যালিগন্যান্ট, যা মস্তিষ্কের ভেতর থেকে উৎপত্তি হয়ে থাকে।
- মেটাস্টেটিক, যা শরীরের অন্যান্য অঙ্গে উৎপত্তি দেখা দিয়ে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা
- সার্জারি।
- রেডিও সার্জারি।
- কেমো থেরাপি।
- বিকিরণ থেরাপি।
- লক্ষ্যযুক্ত ড্রাগ থেরাপি।
- ন্যূনতম আক্রমনাত্মক অস্ত্রোপচার।
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসার বিবরণ
সার্জারি: ম্যালিগন্যান্ট ব্রেন টিউমারের জন্য সার্জারি হচ্ছে সর্বোত্তম
চিকিৎসা। সুস্থ মস্তিষ্কের টিস্যুর ক্ষতি না করে যতটা পারে ক্যান্সার কোষ অপসারণ
করতে সাহায্য করে সার্জারি। তাই সার্জারি ব্রেন টিউমারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা
রাখে।
রেডিও সার্জারি: অস্ত্রপচারের অনুরূপ হচ্ছে, রেডিও সার্জারি। এই রেডিও
সার্জারি মস্তিষ্কের টিউমারের বিকিরণের বিভিন্ন রশ্নিকে ফোকাস করে কোষগুলিকে মেরে
ফেলার জন্য। রৈখিক এক্সিলারেটর এবং গামা ছুরির মত বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে
মস্তিষ্কের টিউমারের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে এই রেডিও সার্জারি।
কেমো থেরাপি: কেমো থেরাপি হচ্ছে, শরীরে ইনজেকশন দেওয়া হয় অথবা মৌখিক
রূপেও নেওয়া হয়। এই কেমোথেরাপি টিউমার কোষকে লক্ষ্য করে মেরে ফেলতে সাহায্য
করে। কেমোথেরাপি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে,
- চুল পড়া
- ক্লান্ত হীনতা
- বমি বমি ভাব
আরো পড়ুনঃ টাক মাথায় চুল গজানোর উপায় জানুন
বিকিরণ থেরাপি: ব্রেন টিউমারের ক্ষেত্রে বিকিরণ থেরাপি চিকিৎসায় এক্স-রে
বা প্রোটন বিম টিউমার কোষ কে মেরে ফেলার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই বিকিরণ থেরাপিটি
ব্যাকিথেরাপির মাধ্যমে করা যায়। যেমন একটি ডিভাইস মস্তিষ্কের ভিতর টিউমারের কাছে
স্থাপন করানো হয় যা টিউমার কোষগুলিকে মেরে ফেলে। এই বিকিরণ থেরাপির পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া গুলো হচ্ছে,
- মাথা ব্যথা করা।
- মাথার ত্বক জ্বালাপোড়া করা।
- স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া।
- ক্রান্তিহীনতা দেখা দেওয়া।
লক্ষ্যযুক্ত ড্রাগ থেরাপি: কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের টিউমারের চিকিৎসা করা
হয় ওষুধ দ্বারা। যাকে বলা হয় লক্ষ্যযুক্ত ড্রাগ থেরাপি। এই থেরাপিও মস্তিষ্কের
ক্যান্সারের কোষগুলোকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে।
ন্যূনতম আক্রমনাত্মক অস্ত্রোপচার: ব্রেন টিউমার সার্জারির জন্য ক্যান্সার
কোষ অপসারণ এর ক্ষেত্রে নিউরো সার্জনরা ন্যূনতম আক্রমণাত্মক অস্ত্রোপচার কৌশল
ব্যবহার করে থাকেন। এই কৌশল অবলম্বনে দ্রুত আরোগ্য পাওয়া যায়। নূন্যতম
আক্রমনাত্মক অস্ত্রোপচার কৌশল ব্যবহারের ফলে হাসপাতালে অতি কম সময় থাকলেই চলে।
ব্রেন টিউমার থেকে বেঁচে থাকার হার কত শতাংশ?
যুক্তরাজ্যের মতে, পুরুষদের মধ্যে বেঁচে থাকার হার এক বছরে প্রায় ৪১ শতাংশ এবং
পাঁচ বছরে প্রায় ১৮ শতাংশ হতে পারে।অন্যদিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে, এক বছরে বেঁচে
থাকার হার প্রায় ৩৯ শতাংশ এবং পাঁচ বছরে হার প্রায় ২০ শতাংশ।