চুলকানি দূর করার সহজ উপায় জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি চুলকানি দূর করার সহজ উপায় গুলো জানতে চান? কিভাবে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরোয়া উপায়ে চুলকানি দূর করা যায় তা নিয়ে মনের মধ্যে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক করছে? যদি তাই হয় তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে চুলকানি দূর করার সহজ উপায় গুলো জানানো হয়েছে।
পোস্ট সূচিপত্র:বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনার মনে জমে থাকা অজানা প্রশ্নের উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন এবং আপনি বেশ উপকৃত হবেন, ধন্যবাদ।

চুলকানি পরিচিতি


দেশে প্রায় অধিকাংশ মানুষ চুলকানি রোগে ভুগছে। অনাকাঙ্খিত ভাবে হঠাৎ করেই কোথা থেকে যেন চুলকানি চলে আসে। ব্যাপারটি খুব সাধারণ হলেও এর কার্য প্রক্রিয়া অসাধারণ। চুলকানি যদি না থামে তবে এক পর্যায়ে বিরক্তিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। খুবই ভয়াবহ রূপ নেই এই চুলকানি। আর এই ভয়াবহ চুলকানির হাত থেকে রক্ষা পেতে ঘরোয়া উপাদান গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

চলুন নিচে জেনে নিই চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপাদান এর নাম ও তার বিবরণ:

চুলকানি দূর করার ঘরোয়া কিছু উপাদান


  • নারিকেল তেল
  • রসুন
  • অ্যালোভেরা
  • নিম পাতা
  • কাঁচা হলুদ
  • লেবু
  • পেট্রোলিয়াম জেলি
  • বেকিং সোডা

চুলকানি দূরীকরণে ঘরোয়া উপাদানের বিবরণ


নারিকেল তেল

বেশ জনপ্রিয় বাজারজাতকৃত তেল হচ্ছে নারিকেল তেল। ত্বকের যত্নে সবচেয়ে নিরাপদ পণ্য হচ্ছে নারিকেল তেল। শুধুমাত্র যত্নে নয় ত্বকের যে কোনো প্রকার সমস্যার সমাধানে নারিকেল তেলের গুরুত্ব অনেক বেশি। 


ত্বকের যে স্থানে চুলকাবে সেই স্থানে একটি বার নারিকেল তেল লাগিয়ে দেখুন। তৎক্ষণাৎ ফলাফল পেয়ে যাবেন। যদি সারা শরীরে চুলকায় এক্ষেত্রে আপনি কুসুম গরম পানিতে নারিকেল তেল মিশিয়ে গোসল করতে পারেন। এতে উপকার মিলবে।

রসুন

প্রাকৃতিক গুনাগুন সম্পূর্ণ রসুন শুধুমাত্র রান্নার কাজে নয় ত্বকের যত্নে ও চুলকানি দূর করতে এর উপকারিতা অনেক বেশি। এ্যান্টি ফাঙ্গাল বা ফাঙ্গাস প্রতিরোধক উপাদান হচ্ছে রসুন। যা চুলকানি দূর করতে সহায়ক। চুলকানি দূর করতে রসুন কেটে কুচিকুচি করে চুলকানি স্থানে লাগিয়ে নিন। 

পাঁচ থেকে সাত মিনিট রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে নিন। ভালো ফলাফল এরপরে জন্য রসুনের পেস্ট তৈরি করে চুলকানি যুক্ত স্থানে লাগাতে পারেন। কিছুদিন নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলকানি একেবারেই দূর হয়ে যাবে।

অ্যালোভেরা

চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বর্ধনের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার উপকারিতা অনেক বেশি এটি অনেকেরই জানা। তবে অনেকেই জানে না যে চুলকানি প্রতিরোধ করতেও অ্যালোভেরার কার্যকারিতা রয়েছে। চুলকানি দ্রুত কমাতে চুলকানি স্থানে অ্যালোভেরার পেস্ট লাগিয়ে দেখুন। খুব দ্রুত চুলকানি কমে যাবে।

নিম পাতা

প্রাচীনকাল থেকেই রোগ জীবাণু দূর করতে নিম পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশেষ করে ত্বকের বিভিন্ন রোগ উপশম করে নিমপাতা। এছাড়াও বাজারজাতকৃত নিমের তেল ত্বকের সমস্যার সমাধানকারী। যদি চুলকানি হয় তবে আক্রান্ত স্থানে নিম পাতার তেল খুবই অল্প পরিমাণে লাগিয়ে দেখুন। ভালো ফলাফল পেতে নিম তেলের সাথে এ্যালোভেরার পেস্ট মিশ্রিত করতে পারেন।নিয়মিত ব্যবহারে আপনি নিজেই এর উন্নতি উপলব্ধি করতে পারবেন।

কাঁচা হলুদ

চুলকানি দূর করতে অ্যালোভেরার মতো একই নিয়মে কাঁচা হলুদের পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই কাঁচা হলুদের পেস্ট চুলকানি স্থানে লাগিয়ে নিন। চুলকানি দূর করতে হলুদের পেস্টটি অনেক ভালো কাজে দেয়।

লেবু

লেবুতে রয়েছে ভিটামিন-সি। যা ত্বকের চুলকানি রোগ প্রতিরোধ করে। চুলকানি গায়েব করতে জাদুকরি উপাদান হচ্ছে লেবুর রস। ত্বকের যে স্থানে চুলকাবে সেই স্থানে লেবুর রস লাগিয়ে নিন। এরপর রসটি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যে চুলকানি বন্ধ হয়ে গেছে।

পেট্রোলিয়াম জেলি

এক এক জনের ত্বক এক এক রকম তাই সব উপাদান সবার ত্বকের জন্য প্রযোজ্য না। যাদের ত্বক খুবই সেনসিটিভ শুধুমাত্র তাদের জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি। কারণ পেট্রোলিয়াম জেলিতে কোন প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। পেট্রোলিয়াম জেলি প্রায় সবার বাসায় সবার ঘরে ঘরেই থাকে। তাই শরীরে চুলকানি হলে এটি হাতের কাছে পাওয়া যায়। সেনসিটিভ ত্বকের অধিকারীরা চুলকানি হলে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

বেকিং সোডা

বেকিং সোডা ব্যবহারে চুলকানি ভালো হয় ঠিকই তবে এটি ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। চুলকানি দূরীকরণে বেকিং সোডা ব্যবহারের নিয়ম:


বেকিং সোডা পাউডারটি পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। বেকিং সোডা ও পানির পরিমাণটি হচ্ছে, তিন ভাগ বেকিং সোডা ও একভাগ পানি। পেস্টটি তৈরি করা হলে চুলকানি জায়গায় লাগিয়ে নিন। আর যদি পুরো শরীরে চুলকানি হয়ে থাকে তবে বেকিং সোডার পানি দিয়ে গোসল করতে হবে।

এর পরিমাণ হচ্ছে, গোসলের পানির পরিমাণে ১/২ কাপ বেকিং সোডা। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য অন্ততপক্ষে ২০ মিনিট বেকিং সোডা মেশানো পানি দিয়ে শরীরে ভিজিয়ে শুকিয়ে নিন।এরপর আবার গোসল করে নিন। দেখবেন পুরো শরীরের চুলকানি একেবারেই গায়েব হয়ে গেছে।

চুলকানি দূরীকরণে কিছু প্যাক তৈরি করুন


ধুলো ময়লা বা গরমে ঘেমে যাওয়াতে মুখে বা গলায় চুলকানি হয়ে থাকে। আর এই অনাকাঙ্ক্ষিত
সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা বেশ কিছু প্যাক তৈরি করতে পারি। 


চলুন নিচে জেনে নিয়ে চুলকানি দূর করার প্যাক:

  • চন্দনের প্যাক
  • টমেটো ও শসার প্যাক
  • হলুদ ও শসার প্যাক
  • নিম পাতা ও হলুদের প্যাক

চুলকানি দূরীকরণে প্যাকের বিবরণ


চন্দনের প্যাক

চন্দন ব্লেন্ড করে নিয়ে এর মধ্যে গোলাপ জল মিশ্রিত করতে হবে। নিজের সুবিধার্থে বাজারে পাওয়া চন্দনের গুড়োর সাথে গোলাপ জল মিশ্রণ করলেও চলবে। এবার এই প্যাকটি চুলকানি দূর করতে লাগাতে পারেন।

টমেটো ও শসার প্যাক

টমেটো ও শশা একই পরিমাণে নিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এবার এই ব্লেন্ড করা শসা ও টমেটোর
রস বের করে পেস্টটি রেখে দিন। এবার চুলকানি স্থানে পেস্টটি লাগিয়ে আধা ঘন্টা রাখুন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে বেশ উপকার হবে।

হলুদ ও শসার প্যাক

শসা কেটে ব্লেন্ড করে এর ভিতর থেকে রস বের করে নিন এবং পেস্টটি রেখে দিন। এবার এই পেস্টটির সাথে পরিমাণ মতো হলুদ মিশ্রিত করুন। এটিও প্রায় আধা ঘন্টা চুলকানি স্থানে লাগিয়ে রাখুন। দেখবেন কিছুটা হলেও চুলকানি দূর হবে।

নিম পাতা ও হলুদের প্যাক

নিম পাতা বেটে অল্প পরিমাণে হলুদ মিশ্রিত করুন। এরপর এই মিশ্রণটি চুলকানি আক্রান্ত স্থানে লাগান। পুরোপুরি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুলকানি গায়েব হয়ে গেছে।

পরামর্শ মূলক কিছু কথা


গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত যে কোনো ঋতুতেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে বিশেষত বর্ষাকাল এর স্যাঁত স্যাতে আবহাওয়ায় ও গরম কালে শরীরে জমে থাকা ঘাম অবস্থায় বেশি চুলকানি দেখা দিতে পারে। আর এই সমস্যাটি খুবই বিরক্তিকর। তাই আমি বলব যে, সমস্যা যেমন আছে সমাধানও রয়েছে। বিশেষ করে ঘরোয়া উপাদান গুলো বেশ উপকারী। কারণ এতে কোন প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না। আশা করছি উপরে উল্লেখিত লেখা গুলো থেকে কোনো না কোনো একটি লাইন হলেও আপনার কাজে আসবে। সবচেয়ে ভালো হয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া। সবশেষে বলতে চাই, পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার মূল্যবান মতামতটি কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানিয়ে দেবেন। 

জিসান স্প্ল্যাশ খুব যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে, ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন