পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় জানতে চান? আপনি কি পায়ের গোড়ালি ব্যথায় ভুগছেন? যদি তাই হয় তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে জানানো হয়েছে। শুধু তাই নয় পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ ও জানানো হয়েছে। এছাড়াও আপনাদের মনে জমে থাকা নানা কৌতুহল ও কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে।
পোস্ট সূচিপত্র:বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনার মনে জমে থাকা অজানা প্রশ্নের উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন এবং আপনি বেশ উপকৃত হবেন, ধন্যবাদ।

পায়ের গোড়ালি ব্যথা


আমাদের শরীরের সমস্ত ভার পড়ে পায়ের গোড়ালিতে। আর এই পায়ের গোড়ালির মাধ্যমেই মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে শরীরের সমস্ত ভার। তাই পায়ের গোড়ালি যদি ব্যথা করে তাহলে সোঁজা হয়ে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে যায়। ঠিকমতো হাঁটতে পারা যায় না। তবে এই ব্যথার অন্যতম সময় হচ্ছে, সকালের দিক। এ সময় ব্যথা খুব বেশি অনুভূত হয়। 


পায়ের গোড়ালি যদি ব্যথা করে তবে তৎক্ষনাৎ এক্স-রে করতে হবে। তাহলে খুব সহজেই বিষয়টি শনাক্ত করা যাবে। যদিওবা পায়ের গোড়ালি ব্যথা হলে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ সাধারণত ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করে থাকে। এতে করে কিছুটা ব্যথা উপশম হয় বটে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো প্রকার ঔষধ সেবন করা উচিৎ নয়।

পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ


  • পায়ের আঙ্গুল থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত একটি শক্ত ব্যান্ড থাকে যাকে বলা হয় প্লান্টার ফাসা। শরীরে সমস্ত ওজন যেনো সরাসরি হাড়ের ওপর গিয়ে না পড়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে প্লান্টার ফাসার কাজ। আর পায়ের গোড়ালি ব্যথার প্রধান এবং অন্যতম কারণ হচ্ছে প্লান্টার ফাসাইটিস। কারণ, দীর্ঘমেয়াদী পায়ের গোড়ালিতে চাপের ফলে ফাসা বা ব্যান্ডে ইনজুরি হয়। যদিও বা প্রথম প্রথম ব্যথা একটু কম হয় তবে পরবর্তীতে হাঁটাচলা করার জন্য ইনজুরি গভীর হয়ে থাকে। দিনে দিনে ব্যথা বাড়তে থাকে। রাতে অনেকক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যথাটা বেশি অনুভূত হয়।
  • পায়ের লিগামেন্ট ইনজুরি বা পা মচকানোর জন্য পায়ের গোড়ালি ব্যথা হয়ে থাকে।
  • হাড় ভাঙ্গা বা ফ্যাকচার এর কারণে পায়ের গোড়ালি ব্যথা করে। এটি হয় সম্ভবত বেশি হাঁটাচলা করলে বা খেলাধুলা অথবা ব্যায়াম করলে। এসব কারণেই পায়ের গোড়ালির উপরে বেশি চাপ পড়ে।
  • অনেক সময় রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায। যার ফলে পায়ের গোড়ালি এবং তার আশেপাশে জয়েন্ট গুলোতে প্রদাহ তৈরি হয়। এতে করে পায়ের গোড়ালিতে অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হয়।

পায়ের গোড়ালি ব্যথা থেকে বাঁচার উপায়


  • মূলত ভিটামিন এর অভাবে পায়ের গোড়ালি ব্যথা হয়। তাই ভিটামিন-ডি ও ভিটামিন-ই এর অভাব আছে কিনা সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • প্রচুর পরিমাণে সবুজ সবজি ও ফলমূল খেতে হবে। এছাড়াও সামুদ্রিক মাছ খাদ্যের তালিকায় রাখতে হবে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে হাঁটাচলা করা যাবে না। শুধু হাঁটাচলা নয় বেশি দাঁড়িয়ে থাকা ও যাবে না। উঁচু নিচু জায়গায় হাঁটাচলা সাবধানে করতে হবে।
  • শরীরের ওজন বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক রাখতে হবে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের গোড়ালি ব্যথা হওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এই রোগীদের নিয়ম মাফিক হাঁটাচলা করতে হবে।
  • পায়ের জুতো নির্বাচনের সময় দেখে শুনে নির্বাচন করতে হবে। মেয়েরা স্টাইল এর জন্য অনেক উঁচু হিল ব্যবহার করে থাকে। এটি করা একদমই চলবে না। স্বাস্থ্য সচেতন হলে এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে এবং অবশ্যই সঠিক মাপের জুতো ব্যবহার করতে হবে।
  • পেশাগত ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশদের পায়ের গোড়ালি বেশি ব্যথা করে। তার কারণ হচ্ছে তারা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করে। তাদের শরীরের পুরো ভর পায়ের গোড়ালির উপর পড়ে। তাই ট্রাফিক পুলিশদের পায়ের গোড়ালি ব্যথা এড়াতে একটু বসার সুযোগ করে নিতে হবে।

পায়ের গোড়ালি ব্যথায় প্রাথমিক চিকিৎসা


  • পায়ের গোড়ালিতে অন্ততপক্ষে দিনে দুবার বরফ দিয়ে সেঁক দিতে হবে।
  • অনেক সময় পায়ের গোড়ালি ফুলে যায়। এক্ষেত্রে শুয়ে থাকলে বা বসে থাকলে পা একটু উপরে করে রাখতে হবে। এতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং পা এর ফোলা ভাব কমতে সাহায্য করে।
  • পায়ের গোড়ালির ওপরে যাতে চাপ কম পড়ে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন হতে পারে হিলপ্যাড যুক্ত জুতা ব্যবহার করা।
  • প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেয়ে ক্ষনিকের জন্য ব্যথা কমিয়ে রাখা যেতে পারে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে

কোন বয়সে পায়ের গোড়ালি ব্যথার ঝুঁকি বেশি


যদিও বা ব্যথা মূলত কারণ ছাড়াই হয়ে থাকে। তবে বেশ কিছু কারণ ও বয়স রয়েছে ব্যথা বেশি হওয়ার ঝুঁকি। চলুন নিচে জেনে নেই কোন বয়সে মানুষের পায়ের গোড়ালি ব্যথা ঝুঁকিতে থাকেন:


বয়স্কদের পায়ের গোড়ালি ব্যথা বেশি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সম্ভবত ৪০ থেকে ৪৫ বছরে এ ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়স্কাদের পায়ের গোড়ালি ব্যথার প্রবণতা অতিরিক্ত বেড়ে যায়। অনেক সময় যাদের শরীর বা ওজন অতিরিক্ত বেশি তাদের পায়ের গোড়ালি ব্যথার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ তাদের পায়ের গোড়ালিতে বেশি চাপ পড়ে যার কারণে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।

পায়ের গোড়ালি ব্যথায় কার্যকরী ব্যায়াম


যারা পায়ের গোড়ালি ব্যথা ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং পায়ের গোড়ালি ব্যথায় ভুগছেন তাদের জন্য কিছু ব্যায়াম রয়েছে। আবার অনেকেরই পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠে মাটিতে পা ফেলতে খুবই সমস্যা হয়। 


তাই তাদের জন্য নিচে কিছু ব্যায়াম উল্লেখ করা হলো:

  • একটি বরফের বোতল নিয়ে পায়ের নিচে রোল করতে হবে প্রায় এক মিনিটের মতো।
  • যখনই ফ্রি থাকবেন তখনই হাত দিয়ে পায়ের পুরো পাতায় ম্যাসাজ করতে হবে।
  • যে কোনো স্থানে বসে পা সোজা রাখতে হবে। এবার একটি বড় ফিতা বা রাবার নিয়ে পায়ের পাতার সামনের দিকে আটকে নিতে হবে। এখন দুই প্রান্ত দুই হাত দিয়ে হালকা চেপে টানতে হবে। এটি প্রায় ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত করা যেতে পারে। একই ভাবে দুই পায়ে করতে হবে।
  • সিঁড়িতে ব্যায়াম করতে হলে সিঁড়িতে এক পায়ের পাতা সামনের অংশ রেখে বাকি অংশ বাইরে রাখতে হবে। যে কোনো এক পায়ের উপর ভারসাম্য রেখে দাঁড়াতে হবে। এটিও প্রায় ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট অবধি করা যেতে পারে।
  • একটি টেনিস বল নিয়ে পায়ের গোড়ালি থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত ঘোড়াতে হবে। দিনের যে কোনো সময় ফ্রি থাকলেই এটি করা যেতে পারে। বলটি পায়ের গোড়ালিতে ঘোড়ানোর সময় আস্তে আস্তে তার উপরে চাপ দিলে বেশি ভালো হয়।
  • সকালে ঘুম থেকে উঠে নীচে নামার আগে খাঁটে থাকা অবস্থায় পা স্ট্রেচ করতে হবে। অন্ততপক্ষে ৫ মিনিট স্ট্রেচ করার পর পায়ের পাতা ম্যাসাজ করতে হবে।

পরামর্শমূলক কথা


মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই শারীরিক ও মানসিক দুই দিকে সুস্থ থাকা অত্যন্ত জরুরী। যেকোনো ব্যাথা আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে তোলে। তাই ব্যথা মুক্ত জীবন যাপন করতে হলে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে। আমরা একটু সতর্কভাবে চললেই সুন্দর সুস্থ জীবন যাপন করতে পারি। পরিশেষে আমি এটুকুই বলতে পারি যে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আশা করছি পুরো আর্টিকেলটি পড়ে কোনো না কোনো লাইন হলেও আপনার জীবনে কোনো কাজে আসবে। আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামতটি জানিয়ে যাবেন। 

জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন সহকারে আপনাদের কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন