শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

প্রিয় পাঠক, আপনি কি শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটা জানতে চান? আসলে কি খেলাধুলা কোন প্রকার কার্যকারিতা রয়েছে কিনা তা নিয়ে আপনার মনে চিন্তা কাজ করে? যদি তাই হয় তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। শৈশব কালের স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে এই পোস্টে।
শুধু তাই নয় আরো রয়েছে, খেলাধুলার ব্যবস্থ, গুরুত্ব ও কার্যকারিতা। এছাড়াও ডিজিটাল যুগের খেলাধুলার ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। সর্বশেষ লেখকের বিশেষ মন্তব্য পেশ করা হয়েছে। তাই অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি আপনার শিশুর জন্য আপনি বেশ উপকৃত হবেন।

পোস্ট সূচিপত্র: শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকা

বর্তমান যুগের থেকে একটু পিছিয়ে চোখ মেলে দেখা যাবে যে আগেকার শিশুদের শৈশবের শুরুটা একটু অন্যরকম। তারা খেলাধুলা করত এলাকার সঙ্গীদের সাথে মাঠে-ঘাটে। কিন্তু বর্তমান যুগে হারিয়ে গেছে সেই শৈশব ও খেলাধুলা দুটোই। বর্তমান যুগে আবির্ভূত হয়েছে ডিজিটাল খেলাধুলা যা প্রযুক্তি নির্ভর। তবে এ প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল খেলাধুলা শারীরিক সুস্থতা বয়ে আনতে পারে না।
প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল খেলাধুলা বর্তমান যুগে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নানান সমস্যা দেখা দেয়। কাজে কোন প্রকার শারীরিক উন্নতি ঘটে না। আপনি জানেন কি? বিশেষজ্ঞদের মতে, খেলাধুলা বাধ্যতামূলক। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুর মনের ও শরীরের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে থাকে।

খেলাধুলার কার্যকারিতা

খেলাধুলার মাধ্যমে শিশু সব দিক থেকে এগিয়ে থাকে। যেমন ধরুন আচার-আচরণ বুদ্ধিমত্তা ও পড়াশোনা। আরও রয়েছে,
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
  • কল্পনা শক্তি ও চিন্তা শক্তি বাড়ে
  • স্বাভাবিক ভাবে শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে
  • উপস্থিত বুদ্ধি বৃদ্ধি পায়
  • সকলে মিলেমিশে থাকার অভ্যাস হয়
  • সামাজিক আচরণ ও সম্পর্ক দৃঢ় হয়

খেলাধুলার গুরুত্ব

  • শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে খেলাধুলা অতি গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলার মাধ্যমে একটি শিশুর শারীরিক মানসিক ও সামাজিক বিকাশ ঘটে। শিশুর শারীরিক কাঠামো সুগঠিত করতে দৌড়াদৌড়ি ও লাফালাফি করা প্রয়োজন। যা খেলাধুলার মাধ্যমে পূর্ণতা পায়। এছাড়াও শিশুর দেহের জমাকৃত অতিরিক্ত শক্তি ক্ষয় করতে খেলাধুলা অতুলনীয়।
  • যেসব শিশুরা অতিরিক্ত খেলাধুলা করে তাদের মানসিক বিকাশ ও চিন্তাভাবনা উন্নত হয়। তবে দুঃখরজনক যে লকডাউন বা কোয়ারেন্টাইন থাকা শিশুরা ও শহর অঞ্চলে বসবাস করা শিশুরা এসব থেকে বঞ্চিত হয। শিশুরা শহর অঞ্চলে সারাদিন বন্দি অবস্থায় থাকে যার জন্য খেলাধুলা সুযোগ খুব কম পায়। ফলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অবনতি ঘটছে।
  • অনেক সময় দেখা যায় শিশুর খিটখিটে মেজাজ হয়ে যায় ঘ্যান ঘ্যান করে ও অকারনে রাগ করে। এতে শিশুর হতাশা, দ্বন্দ্ব এবং আবেগ জনিত উদ্যোগ হ্রাস পায়। তাই শিশুকে খেলাধুলা করতে দিতে হবে। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশু নতুন কিছু আবিষ্কারের ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও শিশুর মন ও শরীর দুটোই ভালো থাকে। মনে রাখবেন খেলাধুলা শিশুর জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধি ও শক্তিশালী হয়।
  • দেখা যায় খোলা প্রান্তর বা মাঠের সঙ্গে দুরন্ত এক শৈশবের অটুট সম্পর্ক রয়েছে। মাঠ একটি বড় প্রান্তর শিশু কিশোরদের বিনোদনের জন্য। খোলা মাঠে দৌড়ঝাঁপের মজা থেকে বঞ্চিত আজকের শহরের ছেলেমেয়েরা। মাঠে অনেক শিশু-কিশোরের সঙ্গে মেলামেশা হয়। যার ফলে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুর মনোযোগ বিস্তৃত হয়। শুধু তাই নয় আস্তে আস্তে শিশুর শরীর, হার ও মার্শল শক্তিশালী হয়। ফলে তারা দ্রুতই বেড়ে ওঠে।
  • প্রায় সকলে নাগরিক জীবনের প্রতি ঝুঁকে পড়াশোনার পাশাপাশি নির্মল আনন্দ গুলো বিসর্জন দিয়ে থাকে। যার ফলে দিন দিন মানবজাতি যান্ত্রিক হয়ে উঠছে। তাই কোন ভাবে কোন কিছু সম্ভব না হলে শিশুর বিকল্প স্থানে খেলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কারণ প্রতিটি অভিভাবকের দায়িত্ব শিশুদের একটি আনন্দ মাখা শৈশব উপহার দেয়া।

খেলাধুলার ব্যবস্থা

আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে শৈশব কালের একাল-সেকাল। ছোটবেলায় মা-খালাদের কাছে শুনেছি সে সময়কার খেলা যেমন:
  • বউ চোর
  • মোরগ লড়াই
  • ইচিং বিচিং
  • কাবাডি
  • ঘুড়ি
  • গোল্লাছুট
  • গুটি খেলা
  • এক্কা-দোক্কা
  • কানামাছি
  • দাড়িয়াবান্ধা
  • ডাংগুলি প্রভৃতি
আহ সেই নামগুলো শুনেই যেন মন ভরে যায়। শুনেছি গ্রামের প্রতিটা অলিতে গলিতে নাকি এসব খেলার খুব প্রচলন ছিল। আর এখন যদিও বা ক্রিকেট খেলার একটু আভাস পাওয়া যায় তা ছাড়া অলিতে গলিতে আর কোন খেলায় দেখতে পাওয়া যায় না। তাই যেভাবেই সম্ভব শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ও উন্নতির জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা করা খুব দরকার।
তবে তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে বিকল্প উপায়ে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। কারন আপনার শিশু শুধুই আপনারই। তাই তার ভবিষ্যৎ সুন্দর করে তোলার দায়িত্বটাও আপনার। এজন্য আপনার শিশুকে আনন্দমাখা শৈশব উপহার দেয়ার দায়িত্ব আপনাকেই পালন করতে হবে।

শহরকেন্দ্রিক শিশুদের ক্ষতিকর দিক 

বর্তমানে শহরকেন্দ্রিক শিশুরা টিভি ও মোবাইলের প্রতি বেশ আসক্ত। এমনভাবে আসক্তির পরিমাণ বেড়ে গেলে শিশুদের মানসিক বিকাশে একটা ভয়াবহ পরিণতি দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে পরিবারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রয়োজন। শিশুকে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় গুরুত্ব দিতে হবে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিশুর খেলাধুলা সময় অপচয় না এটি মাথায় রাখা উচিত। এক্ষেত্রে শহর কেন্দ্রিক শিশুদের যদি বাইরে খেলার সুযোগ না থাকে তবে বাসার ভিতরে অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। এতে কিছুটা হলেও শিশু শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকবে।

ডিজিটাল খেলাধুলার ক্ষতিকর প্রভাব

আগেকার সময় বিকেল বেলাটা শিশুর খেলাধুলার জন্য বরাদ্দ থাকতো। আর এখনকার যুগে পড়াশুনার চাপ এতটাই বেড়েছে যে, বিকেল বেলায়ও পড়াশোনা নিয়ে শিশুদের ব্যস্ত থাকতে হয়। বই খাতা নিয়ে ছুটে বেড়াতে হয় এ কোচিং সে কোচিং। যেহেতু খেলাধুলা এক প্রকার আনন্দের খোরাক। আর এইসব আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় শিশুরা বিভিন্ন রকম অপরাধ চক্রে জড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমান যুগে ডিজিটাল খেলাধুলা যেমন: 
  • কম্পিউটার বা ভিডিও গেমস
  • মোবাইল
  • টিভি ইত্যাদি
যা প্রতিনিয়ত আমাদের কোমলমতি শিশুর ক্ষতি করছ। প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে আজকের শিশুরা। যাতে করে তারা নিজেরাই নিজেদের আলাদা এক জগৎ তৈরি করে নিচ্ছে। আর সে জগত নিশ্চয়ই আপনার আমার শিশুদের জন্য মঙ্গলময়ী নয়। এ জগত ধ্বংস করে দিচ্ছে একটি সহজ সরল শিশুর জীবন।

লেখকের মন্তব্য

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আজকের শিশুরাই হবে আগামীতে দেশ গড়ার কারিগর। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সঠিক ভাবে বেড়ে তোলার জন্য শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক সুস্থতা অতি প্রয়োজন। উন্নত মেধার বিকাশের মাধ্যমে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আশা করতে পারি । আর উন্নত মেধা বিকাশের জন্য শিশুর সব ধরনের খেলার গুরুত্ব অপরিসীম।তাই আপনার শিশুকে চার দেয়ালের মধ্যে আটকে না রেখে তাদেরকে খেলাধুলা করার সুযোগ করে দিন।

খেলাধুলা করার জন্য সুশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করে দিন। শিশুরা খেলাধুলা করতে গেলে একটু আঘাত পেতে পারে এটাই স্বাভাবিক। তবে সেটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। স্বাভাবিক আঘাত শিশুর শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। আপনার শিশুকে প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন।এতে করে আপনি যখন শিশুর জীবনে থাকবেন না তখন সে নিজেই নিজের জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হবে । শিশুর সাহস বৃদ্ধি পাবে।

দেখবেন শিশুর ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়ে উঠবে। আর হ্যাঁ শিশুদের সামনে একদম ভয় পাবেন না। আপনি যদি কোন বিষয় নিয়ে শিশুদের সামনে ভয় পান তাহলে আপনার শিশু আরো ভীত হয়ে উঠবে। এতে করে তার জীবনের কঠিন সমস্যা গুলোর সম্মুখীন হতে পারবে না। উপরে উল্লেখিত কথা গুলো অনুসরণ করুন দেখবেন আপনার শিশুর জীবন পূর্ণতা পাবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন