কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? কলা ফল আপনার অতি পছন্দের একটি ফল তবে তার উপকারিতা কতটুকু জানেন না? যদি এমনটি হয় তবে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে কলা ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি কলা ফল সম্পর্কে আরো অজানা তথ্য দেওয়া রয়েছে এই পোস্টে।
বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনার মনে ঘুরপাক করা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনার অনেক ভালো লাগবে এবং আপনার উপকারে আসবে, ধন্যবাদ।

কলার ভূমিকা


কলা হচ্ছে সবচেয়ে সহজলভ্য একটি ফল। কলা শরীরে ক্যালরির চাহিদা পূরণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই ফলটি সহজলভ্য বলার কারণ হচ্ছে, সচরাচর সব সময় পাওয়া যায় এবং দামও নাগালের মধ্যেই থাকে। ধনী গরিব সকলেই এই ফলটি ক্রয় করতে পারে। ক্যালরি ছাড়াও আরো নানারকম পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হচ্ছে এই ফল। 

কলা ফলে উপস্থিত রয়েছে, ভিটামিন, আইরন, মিনারেল, ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, খনিজ পদার্থ, ক্যারোটিনয়েড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, রিবোফ্লাবিন, নিয়াসিন, কপার ইত্যাদি। এই সকল উপাদান গুলো শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তাই শরীরের স্বার্থে উপকারী ফল এর তালিকায় কলা রাখা যায়।


চলুন তাহলে নিচে জেনে নেই কলার উপকারিতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারনা-

কলা ফল এর পুষ্টিগুণের মাত্রাগুলো ক্রমানুসারে দেওয়া হলো:

  • ক্যালোরি- ১১২
  • ফ্যাট- ০ গ্রাম
  • প্রোটিন- ১ গ্রাম
  • ফাইবার- ৩ গ্রাম
  • কার্বস- ২৮ গ্রাম
  • নিয়াসিন- ৫% DV
  • ম্যাগনেসিয়াম- ৮% DV
  • পটাসিয়াম- ১০% DV
  • কপার- ১১% DV
  • রিবোফ্লাভিন- ৭% (Daily Value)
  • ভিটামিন সি-১২% (Daily Value)

কলার পুষ্টিগুণের উপকারিতা


এক কথায় বলতে কলা ফল হচ্ছে, দামে কম মানে সেরা। তাই নিম্নে কলার পুষ্টিগুণের উপকারিতা গুলো ক্রমানুসারে দেওয়া হলো:

  • কিডনি ভালো রাখতে সক্ষম হয়।
  • শরীরে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
  • চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  • ত্বকের তারুণ্যতা বজায় রাখে।
  • রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • হাড় শক্ত করে।
  • শরীরের পেশী তৈরি করে ও পেশী টান ধরা কমায়।

কলার উপকারিতার বর্ণনা


কিডনি ভালো রাখতে সক্ষম হয়: কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা কিডনি সুস্থ রাখতে বিশেষ উপযোগী। কারণ পটাশিয়াম কিডনি ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফলের মধ্যে একটি করে কলা রাখলেও কিডনির রোগ ৫০% পর্যন্ত কমে যাবে।

শরীরে ওজন কমাতে সাহায্য করে: কলা ফলে রয়েছে কম ক্যালরি কম ফ্যাট। যার জন্য কলা খেলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আবার কলাতে রয়েছে বেশি পরিমাণে ফাইবার। যা খাবার হজম করে মল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: গবেষকরা গবেষণা করে তথ্য দিয়েছে যে, কলায় থাকা পটাশিয়াম হৃদরোগ এর ঝুঁকি ২৭% কমিয়ে দিতে সক্ষম হয়। আরো জানিয়েছেন যে, কলার মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে চর্বির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এতে করে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে কলা ফল।


হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: আমরা আগেই জেনেছি যে, কলাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কলাতে উপস্থিত থাকা এই ফাইবার শরীরে ফ্যাট ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করতে সক্ষম হয়। এতে করে হার্ট অ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপ এর ঝুঁকি কম থাকে। এছাড়াও কলা রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। যার কারনে মন নরম করতে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা দূর হয় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে: পাকা ও কাঁচা উভয় কলাতে পেকটিন নামের ফাইবার রয়েছে। এই পেকটিন নাম এর ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে এবং মল নরম করে থাকে। গবেষকরা জানিয়েছে যে, কলাতে থাকা এই পেকটিন নাম এর ফাইবার কোলেন ক্যান্সার থেকে দূরে রাখে।

চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে: ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং লুটেইন চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন যে, লুটেইন এক ধরনের পুষ্টি। যা চোখের ম্যাকুলার অবক্ষয়ের ঝুঁকি কমাতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: কলাতে রয়েছে লেকটিন নামক প্রোটিন। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ যেমন লিউকোমিয়ার বৃদ্ধি হয় তা রোধ করতে সাহায্য করে থাকে এই লেকটিন নামক প্রোটিন। এছাড়াও লেকটিন এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। আর এই এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে ফ্রি-রেডিক্যাল গুলোকে ধ্বংস করে। যদি আমাদের শরীরে এই লেকটিন নামক প্রোটিন না থাকতো তাহলে ফ্রি-রেডিক্যাল গুলোর পরিমাণ বেড়ে যেতো। যা আমাদের কোষকে ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকতো।

ত্বকের তারুণ্যতা বজায় রাখে: কলাতে উপস্থিত থাকা ম্যাঙ্গানিজ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে তোলে। আবার অনেকের ত্বকে বার্ধক্য জনিত সমস্যা থেকে থাকে। যা কলা ফল খাওয়াতে অনায়াসে প্রশমিত হয়ে যায়। তাছাড়া কলাতে থাকা জল আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সক্ষম হয়।

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: কলাতে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রাকে মাঝারি করে থাকে। এমনকি এই উপাদানটি পেট খালি করে ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে। কলা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না বা বাড়াতে পারে না। এছাড়া কলাতে উচ্চ কার্বোহাইড্রেট থাকা সত্ত্বেও ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার ঝুঁকি একদমই নেই বললেই চলে।


রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: আমরা জানি যে, সোডিয়াম বা লবণ যা আমাদের শরীরের রক্তচাপ বাড়িয়ে থাকে। আর পটাশিয়াম শরীরের রক্তচাপ কম করে কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমকে সুস্থ ভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়ে থাকে। তাই একটি কলাতে যে পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে তা একজন মানব শরীরে দৈনিক পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করে থাকে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন একটি করে হলেও কলা খাবেন।

হাড় শক্ত করে: কলাতে উপস্থিত রয়েছে প্রিবায়োটিক উপাদান। যা দেহের ক্যালসিয়াম শোষণ করে থাকে। এতে করে হাড়ের সুস্থতা বজায় থাকে।

শরীরের পেশী তৈরি করে ও পেশী টান ধরা কমায়: অনেক সময় আমরা অনেক পরিশ্রম করে থাকি বা এক্সারসাইজ করে থাকি। যা করার পর পেশী টান ধরে থাকে। এই পেশী টান ধরার অন্যতম কারণ হচ্ছে, ম্যাগনেসিয়াম এর অভাব। এ সময় যদি আপনি একটি করে হলেও কলা খান তবে সকল পরিশ্রম বা এক্সারসাইজ এর পর ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। 

তৎক্ষণাৎ পেশী টান ধরা বন্ধ হয়ে যাবে এবং শরীরের শক্তি সঞ্চার হবে। তাই অতিরিক্ত পরিশ্রমী মানুষ বা খেলোয়ার অথবা এক্সারসাইজ এর অধিকারীরা খাদ্য তালিকায় অবশ্যই কলা ফলটি রাখবেন। চিকিৎসাবিদরা জানিয়েছেন যে, কলাতে থাকা খনিজ এবং ইলেকট্রোলাইট পেশী গঠন করতে বিশেষভাবে কাজ করে থাকে।

পরামর্শ মূলক কথা


বিশেষ করে শিশুদের প্রতিনিয়ত কলা খাওয়াবেন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই কলা ফলটি রাখবেন। কারণ প্রতিদিন কলা ফল খেলে লিউকোমিয়া হওয়ার ঝুঁকি অধিক হারে কমে যায়। এছাড়াও পুরো একটি কলাতে যতটা পরিমানে ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে তা আমাদের প্রতিদিনের ডায়েটের জন্য অতি যথেষ্ট। আবার অতি সহজলভ্য সবজির মধ্যেও উপযোগী হচ্ছে কাঁচা কলা। 

তরকারি কিংবা ভর্তা যে কোন উপায়ে খেলেই উপকার মেলে। এক কথায়, দেহে শক্তি জোগাতে ও সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে কলা ফলের বিকল্প নেই। যাই হোক, উপরে উল্লেখিত সম্পূর্ণ লেখাগুলো পড়ে আপনার যদি একটুও ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামতটি জানিয়ে যাবেন।

জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন