কমলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি কমলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চান? কমলা ফল আপনার অতি প্রিয় তবে তার উপকারিতা কতটুকু তা জানেন না? যদি তাই হয় তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে কমলার উপকারিতা পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। তার পাশাপাশি কমলা ফল সম্পর্কে আরো অজানা তথ্য দেওয়া রয়েছে এই পোস্টে।
বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনার মনে ঘুরপাক করা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনার অনেক ভালো লাগবে এবং আপনার উপকারে আসবে, ধন্যবাদ।

কমলার ভূমিকা


মৌসুমী ফল গুলোর মধ্যে কমলা ফল অন্যতম। টসটসে রসে ভরা দেখতেও অপরূপ সুন্দর কমলা ফল সবার যেন নজর কেড়ে নেয়। টক মিষ্টি স্বাদে ভরপুর এই ফল। সব ফলের মধ্যে কমলা রঙের ছিটেফোঁটা যদি থেকে থাকে তাহলে সবার আগে এই ফলটির ওপরে সকলের নজর আসে। আগেকার সময় কমলা ফলকে শীতকালীন ফল হিসেবেই চিনতো সবাই। তবে এখন সারা বছরই পাওয়া যায় এই ফল। মজার ব্যাপার হলো এর ফল শুধু রূপে গুণে ভরপুর তা নয় পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার ভূমিকাও অনেক বেশি। বেশ জনপ্রিয় একটি ফল হচ্ছে কমলা ফল।

কমলা ফলের পুষ্টিগুণ


গবেষকরা জানিয়েছেন যে, নির্দিষ্ট আকারের একটি কমলায় ৬২ ক্যালরি থাকে। আর কমলায় পানি রয়েছে ৮৭ শতাংশ। ভিটামিন বি১, ভিটামিন সি, ফাইবার, ফোলেট, কপার-পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ কমলা ফল। সব মিলিয়ে এক কথায় দারুন স্বাস্থ্যকর ফল হচ্ছে কমলা ফল। অনেক সময় শীতের আমেজে আমরা পানি খেতে অনাগ্রহী বোধ করি। ঠিক সেই সময় পানির ঘাটতি কমাতে কমলা ফলের ভূমিকা অনেক বেশি। কারণ কমলা ফলটি আমরা রুচি করে খেতে পারি যা শরীরে পানির শতাংশ পূরণ করে। 


এছাড়াও কমলা ফলে থাকা আঁশ বাওয়েল মুভমেন্ট ভালো রাখে। কমলা আমাদের শরীরে ক্ষুধার তৃপ্তি মেটায়। যা ওজন কমাতে ও হজম ঠিক রাখতে খুব জরুরী। যেহেতু কমলায় রয়েছে ভিটামিন সি যার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও ত্বক ভালো রাখে। কমলার রসে যে ভিটামিন থাকে তা ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হয়। কমলা শরীরে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পুনর্গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

কমলার উপকারিতা


  • ত্বকের তারুণ্যতা বজায় রাখে।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করে।
  • শরীরে ওষুধ গ্রহণে সাহায্য করে।
  • ভাইরাস আক্রমণ থেকে দূরে রাখে।
  • শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে।

উপকারিতার বর্ণনা


ত্বকের তারুণ্যতা বজায় রাখে: সুন্দর ত্বক কেবলমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্যই প্রকাশ করে না, এটি মন ভালো রাখে ও সুস্থতাও প্রকাশ করে। তাই আমাদের ত্বক ভালো রাখা ও স্বাস্থ্যজ্জল রাখা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য খেতে হবে এমন খাবার যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কমলায় থাকা ভিটামিন ত্বককে কোমল নমনীয় ও সুন্দর করে তোলে। কমলায় বিদ্যমান রয়েছে নারিজেনিনের মতো বায়ো এ্যাকটিভ উপাদান যা উন্নত মানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এ্যান্টি ইনফ্লামাটর। 


যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরের অক্সিজেনের অনু স্থিতিশীল রাখে। এছাড়াও ফ্রি রাডিক্যাল নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে। এই নিষ্ক্রিয়করণের ফলে ত্বক পরিষ্কার হয় এবং বয়সের ছাপ দূর হয়ে যায়। ত্বককে করে তুলে ভেতর থেকে উজ্জ্বল ও কোমল, নমনীয়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ত্বকের যত্নে প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করতে কমলা ব্যবহার করা হয়।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: ক্যালোরি ফ্রি ফল হচ্ছে, কমলা ফল। তবে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে এই ফলে। মানব শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন: নিয়াসিন, থিয়ামাইন, ভিটামিন বি৬, কপার ও ম্যাগনেসিয়াম যা রয়েছে কমলায়। আর এই পুষ্টি উপাদান গুলো কমলায় থাকার কারণে শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে: দৈনন্দিন জীবনের জন্য দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে হলে চোখের জন্য দরকার পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ যা রয়েছে কমলায়। কমলায় বেশ পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে যার কারণে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সক্ষম হয়।

মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে: আমাদের মস্তিষ্ক শক্তিশালী করতে সাহায্যকারী ফল হচ্ছে কমলা ফল। কমলা ফলে উপস্থিত রয়েছে ফ্লেভনয়েডস। যা ব্রেইন ফাংশন ঠিক রাখে এবং পাশাপাশি মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। এজন্য এই ফল খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা অধিক হারে বেড়ে যাবে। বড়রা তো বুঝে শুনে খাবেনি এই ফল পাশাপাশি শিশুদের খাবারের নিয়মিত রাখবেন কমলা ফল।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: কমলায় বিদ্যমান থাকা পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মধ্যে খনিজ উপাদান গুলো শরীরের সোডিয়ামের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হয়। যার কারণে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন ঠিক থাকে। এছাড়াও কমলার আঁশ যা সম্পূর্ণরূপে চর্বিহীন ও সোডিয়াম মুক্ত এবং কোলেস্টেরল মুক্ত উপাদান গুলো হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করে: কমলা ফলের বিশেষ পুষ্টিগুণ হচ্ছে ফ্ল্যাভনয়েড যা ফুসফুস এবং ক্যাভিটি ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে বিশেষ কার্যকর। এছাড়াও কমলা ফলে রয়েছে আলফা ও বেটা ক্যারোটিনের মতো ফ্ল্যাভনয়েড এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সহ আরো অন্যান্য এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যৌগ। যা ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রতিদিন একটি করে হলেও কমলা খাওয়া প্রয়োজন।<


শরীরে ওষুধ গ্রহণে সাহায্য করে: কমলা ফল শরীরে ওষুধ গ্রহণের সাহায্যকারী একটি ফল। কমলা ফলের রস ওষুধের বায়োকেমিক্যাল ও সাইকোলজিক্যাল এর প্রভাব শরীরে গ্রহনের মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ হতে সক্ষম হয় রোগী।

ভাইরাস আক্রমণ থেকে দূরে রাখে: শীতকালীন সময় মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা হলেও দুর্বল হয়ে যায়। নানা প্রকার ভাইরাস শরীরে আক্রমণ করে থাকে। আর এই সকল সংক্রমণ থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কমলা ফল রাখা। কমলা ফলে থাকা পুষ্টি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অধিক হাড়ে বাড়িয়ে তোলে।

শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে: মেটাবলিক সিনড্রোম ও ডায়াবেটিস রোগীদের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যাবশ্যক। আর এই কমলার খোসায় চিনির পরিমাণ একেবারেই নেই। তাই কমলা ফল রক্তে শর্করার মাত্রায় বিশেষ প্রভাব ফেলে। এজন্য কমলা ফলের পুষ্টিগুণ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

ত্বকের যত্নে কমলার খোসার গুনাগুন


কমলা ফল খাওয়ার পর অনেকেই খোসা ফেলে দেয়। তবে জানেন কি? শত গুণের অধিকারী কমলা ফলের মতোই কমলার খোসাতেও গুণের শেষ নেই। নানানভাবে রূপচর্চার জন্য ব্যবহৃত হয় কমলার খোসা। চলুন তাহলে নিচে জেনে নেই কমলার খোসা কি কি উপকারে আসে-

  • ব্ল্যাক হেডস দূর করে থাকে।
  • দাঁতের হলদে ভাব দূর করে।
  • ত্বকের তারুণ্যতা ফিরিয়ে আনে।
  • ত্বককে করে তোলে মলিন ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল।

পরামর্শ মূলক কথা


নানা গুণের ভান্ডারী ফল হচ্ছে কমলা ফল। যা অত্যন্ত সুস্বাদু, সুলভ ও পুষ্টিগুণে অনন্য। একই সঙ্গে ছোট বড় নানা ব্যাধি ও সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয় এই কমলা ফল। সুঘ্রাণযুক্ত সুন্দর এই ফলটির কথা যতই বলবো ততই যেনো কম হয়ে যায়। পুষ্টিকর ও উপকারিতার শেষ মেলে না এই ফলটির বৈশিষ্ট্য তে।

তবে সবচেয়ে বেশি ভালো হয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সকল খাবার খাওয়া। যাই হোক পরিশেষে আমার প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলব যে, উপড়ে উল্লেখিত সম্পূর্ণ লেখাগুলো পড়ে আপনার যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামতটি নিচে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে যাবেন।

জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন