আনারস খেলে কি ক্ষতি হয় জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি আনারস খেলে কি ক্ষতি হয় তা জানতে চান? আনারস ফল খেতে খুব ইচ্ছে করছে তবে তার ক্ষতিকর দিক নিয়ে খুব চিন্তিত? যদি তাই হয় তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে আনারস খাওয়ার ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও আনারস ফল সম্পর্কে আরো অজানা তথ্য দেওয়া রয়েছে এই পোস্টে। আপনার জানা অজানা সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া রয়েছে।
বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনার মনে ঘুরপাক করা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। পোস্টটি পড়ে আপনার অনেক ভালো লাগবে এবং আপনার উপকারে আসবে, ধন্যবাদ।

আনারস এর ক্ষতিকর ভূমিকা

 
আমরা সকলেই জানি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় ফল এর ভূমিকা অনেক বেশি। আর এই ফল এর মধ্যে আনারস দারুন উপকারী। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল হচ্ছে আনারস। তবে পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন যে, অতিরিক্ত মাত্রায় আনারস খেলে শরীরের বিপদ অনিবার্য। অনেকেই গরমে স্বস্তি পাওয়ার জন্য বা অসুস্থ হলে মুখের রুচি আনার জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে আনারস খেয়ে থাকে।

আবার অনেকের খুবই পছন্দনীয় ফল হচ্ছে আনারস। যার কারণে অনায়াসে অতিরিক্ত মাত্রায় খেয়ে থাকে আনারস ফল। আর এটি করার কারণে শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন আপনিও। চলুন তাহলে নিচে জেনে নেই আনারস ফল অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে কি কি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে?

অতিরিক্ত পরিমাণে আনারস খেলে কি কি সমস্যা দেখা দেয় ?


  • রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
  • রক্ত পাতলা করে দেয়।
  • পেট এর সমস্যা দেখা দেয়।
  • এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দেয়।
  • দাঁতে ক্ষয় হয়।
অতিরিক্ত পরিমাণে আনারস খেলে যা যা সমস্যা দেখা দেয় তার বর্ণনা নিম্নে অতি সংক্ষেপে দেওয়া হলো:

রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়: গ্লুকোজ এর পরিমাণ অনেকটাই বেশি থাকে আনাস ফল এ। যার কারণে অতিরিক্ত আনারস খেলে শর্করার মাত্রা অধিক হারে বৃদ্ধি পায়। পুষ্টিবিদরা সতর্কবার্তা দিয়েছেন যে, যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুক্তভোগী তারা এই ফলটি এড়িয়ে চলবেন। এছাড়াও শরীরের অতিরিক্ত ওজনের অধিকারীরা এই ফলটি খুবই স্বল্প মাত্রায় খাবেন। যদি পারেন সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাবেন।

রক্ত পাতলা করে দেয়: আনারসে বিদ্যমান রয়েছে ব্রোমেলেইন নাম এর এক ধরনের এনজাইম। যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর নয় তবে দেহে যদি ব্রোমেলেইন এর পরিমাণ প্রয়োজন এর তুলনায় বেশি থেকে থাকে তাহলে সমস্যা দেখা দেয়। এর সমস্যার স্বরূপ হচ্ছে শরীরের রক্ত পাতলা করে দেওয়া। যার ফলে রক্তপাত এর আশঙ্কা বা ঝুঁকি অধিক হারে বেড়ে যায়।


পেটের সমস্যা দেখা দেয়: আনারসে রয়েছে অ্যাসি উপাদান। যা অনেক সময় হজম হয় না। আর হজম না হওয়ার ফলে গ্যাস ও বুক জ্বালার মত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন যে, খাবার খাওয়ার পর আনারস খাওয়া যেতে পারে তবে খালি পেটে আনারস একদমই খাওয়া যাবে না।

এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দেয়: আনারস খাওয়ার পর অনেকেরই এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়। যেমন:

  • ঠোট ফুলে যায়,
  • ত্বক চুলকায়,
  • জিভে তিত্তিরে ভাব হয়,
  • গলায় সুরসুরি বোধ হয়।
এই সমস্যা গুলো থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে, আনারস কেটে তা খাওয়ার আগে লবণ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে দিতে হবে। এই নিয়মে খেলে এলার্জিজনিত কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

দাঁতের ক্ষয় হয়: আনারস ফল দাঁত এর ক্ষতি করতে সক্ষম হয়। পরিমিত পরিমাণে আনারস খেলে সমস্যা নেই তবে অতিরিক্ত পরিমানে আনারস খেলে দাঁত এর এনামেল ক্ষয় হয়ে যায়। যেহেতু আনারস ফলে এসিডের পরিমাণ বেশি থাকে সেহেতু ফলটি খাওয়ার সাথে সাথে দাঁতের সংস্পর্শে এসে দাঁত ক্ষয় করে।
 

কাঁচা বা সবুজ আনারস কি ক্ষতিকর?


হ্যাঁ অবশ্যই কাঁচা বা সবুজ আনারস ক্ষতিকর। অনেকেই কাঁচা বা সবুজ আনারস পছন্দ করে আবার অনেকেই জুস তৈরির জন্য কাঁচা আনারস বেছে নেয়। যা বিষাক্ত এবং দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এছাড়াও মাঝে মধ্যে কাঁচা আনারস খাওয়ার জন্য বমির প্রবণতা অধিক হারে বেড়ে যায়।

আনারস খেলে কি ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়?


হ্যাঁ আপনি ঠিক শুনেছেন বা জেনেছেন, আনারস খেলে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবে সব রোগীদের জন্য নয়। যদি কোন রোগী অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টি কনভালসেন্ট ব্যবহার করে তাহলে ডাক্তাররা তাকে আনারস খাওয়া থেকে একদমই বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়। কারণ এতে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়ে থাকে।

আনারস খেলে কি গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে?


হ্যাঁ আনারস খেলে নারীদের গর্ভপাতের ঝুঁকি থেকে থাকে। গর্ভকালীন সময় ও গর্ভাবস্থার পরেও আনারস খাওয়া থেকে একদমই বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন যে, গর্ভকালীন সময় মহিলাদের আনারস খাওয়া নিষেধ এবং বাচ্চা প্রসব করার পর থেকে বাচ্চার দুগ্ধকালীন সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত একদমই আনারস খাওয়া চলবে না। নাহলে মা ও শিশু উভয়কেই মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। 



চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় আনারস খেতে নিষেধ করার প্রধান কারণ হচ্ছে, আনারস ফলে রয়েছে উচ্চমানের ব্রোমেলিন। যা গর্ভবতীর জরায়ুকে নমনীয় করে ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রসব যন্ত্রনা দেখা দেওয়া সম্ভাবনা থাকে বা মিসক্যারেজ হয়ে থাকে। তাই এসব সমস্যা থেকে সাবধানে থাকতে অন্ততপক্ষে গর্ভধারণের প্রথম তিন থেকে চার মাস আনারস ফল একদমই খাওয়া যাবেনা।

দুধ ও আনারস একসাথে খেলে কি বিষক্রিয়া ঘটে?


নানান লোকেদের মুখে শোনা গেছে, দুধ ও আনারস একসঙ্গে খেলে খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটে। এর ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে যায়। তবে চিকিৎসকদের মতে, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। বৈজ্ঞানিকভাবে জানানো হয়েছে যে, দুধ ও আনারস একসাথে খেলে বিষক্রিয়া ঘটে এমনটা কোথাও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও বা ফল দিয়ে দুধ খুব কম খাওয়া যায় তবে কিছু কিছু মানুষ খেলেও মিষ্টি জাতীয় ফলের সাথে দুধ খায়। 


কোনো প্রকার টক জাতীয় ফলের সাথে দুধ মিশিয়ে খাওয়া একদমই হয় না। কারণ এতে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। টক জাতীয় ফলের সাথে দুধ হজমে অভ্যস্ত না পাকস্থলী। তাই আনারসের মতো টক জাতীয় ফলের সাথে দুধ নিতে পারে না পাকস্থলী। যার কারণে এসিডিটি ও বদহজমের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া দুধের সঙ্গে আনারস খেলে বিষক্রিয়া ঘটে বা মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায় এমনটা কোথাও বলা হয়নি বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

আনারস পাকা না কাঁচা কোনটি খাবো?


কাঁচা আনারস এর তুলনায় পাকা আনারস খেতে একটু বেশিই মজা এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কাঁচা আনারস স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে আসে। তবে শুধু কাঁচা আনারস নয়, পাকা আনারস এর ভেতরে থাকা স্টেম বা সাদা অংশটিও খাওয়া চলবে না। এটি হজম প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে খাদ্যআশ দলা পাকিয়ে। যার ফলে এসিডিটি দেখা দেয়। তাই আনারস কেটে নেওয়ার সময় সাদা আর শক্ত অংশটি ফেলে দিতে হবে।

পরামর্শমূলক কথা


যদিও আনারস ফলে অনেক উপকারিতা রয়েছে তবে মনে রাখবেন, সব ফল সবার শরীরের জন্য প্রযোজ্য না। পুষ্টিবিদরা এটিও জানিয়েছেন যে, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে আনারস ফল খানিকটা ক্ষতিকর। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের আনারস ফল কম খাওয়াই ভালো। সবচেয়ে বেশি ভালো হয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সকল খাবার খাওয়া। যাইহোক পরিশেষে আমার প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলব যে, উপরে উল্লেখিত সম্পূর্ণ লেখাগুলো পড়ে আপনার যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মতামতটি নিচে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দেবেন।

জিসান স্প্ল্যাশ অতি যত্ন সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন