কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার সহজ উপায় জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার সহজ উপায় জানতে চান? আপনার কাপড়ে নানান সময় বিভিন্ন কারণে দাগ লেগেই থাকে? যদি এমনটি হয় তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার সহজ উপায় সম্পর্কে জানানো হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে, কাপড়ের রং ঠিক রাখার উপায় ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস।
পোস্ট সূচিপত্র:বিস্তারিত জানতে অতি মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়তে থাকুন। আশা করছি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনার মনে জমে থাকা অজানা প্রশ্নের উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন এবং আপনি বেশ উপকৃত হবেন, ধন্যবাদ।

কাপড় এর কঠিন দাগ


  • তেল এর দাগ
  • চা এর দাগ
  • রক্তের দাগ
  • বমির দাগ
  • ঘাম এর দাগ
  • কালির দাগ
  • মেহেদির দাগ
  • মেক-আপ এর দাগ
  • হলুদ এর দাগ
  • চকলেট এর দাগ
  • জুস এর দাগ

কাপড়ের কঠিন দাগ তোলার সহজ উপায়


তেল এর দাগ-

অনেক সময় রান্না করতে গিয়ে তেল ছিটকে পড়ে কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। আবার রাতে মাথায় তেল দিয়ে ঘুমালে বালিশের কভারে তেল এর দাগ লেগে যায়। এক্ষেত্রে এই দাগটি তুলতে আপনি সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। 


যদি তাতে না হয় তবে, দুই চামচ পানিতে চার চামচ বেকিং সোডার পেস্ট তৈরি করবেন। এবার কাপড়ে দাগের স্থানে পেস্টটি ঘষে ঘষে লাগান। তারপর এক থেকে দুই ঘন্টা রেখে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। দেখবেন দাগ পুরোপুরি চলে গেছে।

চা এর দাগ-

অনেক সময় চা খেতে যেয়ে হাত ফসকে চা পড়ে কাপড়ে দাগ লেগে যায়। এক্ষেত্রে চিনি ভিজিয়ে আঠালো করে দাগ স্থানে ঘষুন। কাপড় থেকে চা এর দাগ একেবারেই দূর হয়ে যাবে।

রক্তের দাগ-

হঠাৎ এক্সিডেন্টলি কোনো ভাবে কাপড়ে রক্ত লাগতেই পারে। তবে সাধারণত রক্তের দাগ কাপড়ে শুকিয়ে গেলে উঠানো কষ্টকর হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রক্তের দাগ লাগা কাপড়টি পানিতে ভিজিয়ে নিন। তারপর দাগ স্থানে লবন লাগিয়ে কিছুক্ষন ঘষতে থাকুন। যদি মনে হয় রক্তের দাগ উঠে গেছে তবে কাপড়টি ডিটারজেন্ট বা সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন।

বমির দাগ-

অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত বমি হয়ে কাপড়ে বমির দাগ লেগে যায়। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনি বমির কাপড় ধোয়ার জন্য যে ডিটারজেন্ট মেশানো পানিটি ব্যবহার করবেন তার সাথে সামান্য লেবুর রস ও পরিমাণ মতো লবণ মিশ্রিত করুন। এবার এই মিশ্রণে বমির দাগ লাগা কাপড় ভিজিয়ে রাখুন এবং নিয়ম মাফিক ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন দাগ পুরোপুরি উঠে গেছে।

ঘাম এর দাগ-

সাধারণত ঘাম এর দাগ ছেলেদের শার্ট এর কলারে বেশি লেগে থাকে। কলারে হলদে গারো বর্ণ ধারণ করে। এই দাগ দূর করতে শুধুমাত্র শ্যাম্পু ব্যবহার করলেই চলবে। ঘাম এর দাগ স্থানে শ্যাম্পু লাগিয়ে ভালোভাবে ঘষতে থাকুন দেখবেন দাগ একদম দূর হয়ে যাবে।

কালির দাগ-

বেশিরভাগ সময় কাপড়ে কালি লেগে যায় এক্ষেত্রে সে কালি দূর করতে কখনোই সে কাপড়টি ডিটারজেন্ট বা সাবানে ধুবেন না। এতে কাপড়ে কালি স্থায়ী হয়ে যাবে। পরে উঠানো কিছুতেই সম্ভব হবে না। এছাড়াও কালি লাগা কাপড় কখনোই ইস্ত্রি করবেন না। কালি লাগা কাপড় থেকে কালির দাগ উঠানোর পদ্ধতিটি হলো, 


একটি স্পঞ্জ দুধে ভিজিয়ে সে স্পন্সটি কালি লাগা স্থানে অনবরত ঘষতে থাকুন। এ পদ্ধতিটি যদি কাজে না লাগে তবে, কালি স্থানে লেবু দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। সাবধান লেবু একদমই ঘষবেন না এতে কালি ছড়িয়ে পড়বে। এরপর কাপড় সাধারণ পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। কাপড় থেকে কালির দাগ চিরতরে উঠে যাবে।

মেহেদির দাগ-

মেহেদির দাগ দূর করতেও সেই একই উপকরণ দুধ বেশ কার্যকর। কাপড়ে মেহেদির দাগ স্থানে প্রায় এক ঘণ্টা দুধ দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ডিটারজেন্, সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মেহেদির দাগ দূর হয়ে গেছে।

মেক-আপ এর দাগ-

অনেক সময় আমরা পুরোপুরি রেডি হওয়া সত্বেও চেহারার সৌন্দর্য বর্ধনে আর একটু টাচ-আপ করে থাকি। যার ফলে অসাবধানতায় কাপড়ে মেক-আপ এর দাগ লেগে যায়। এটি দূর করতে একটি রুটির সাদা অংশ গুঁড়ো করে নিন। এবার সেই গুড়ো মেক-আপ এর দাগ স্থানে ঘষে নিন। কিছুক্ষণ পর দেখবেন দাগ পুরোপুরি উঠে এসেছে। তৎক্ষণাৎ রুটির গুড়ো গুলো কাপড় থেকে ঝেড়ে ফেলুন।

হলুদ এর দাগ-

কাপড়ে হলুদ এর দাগ স্থানে লেবু লাগিয়ে ঘষতে থাকুন। এবার লেবু লাগানো অবস্থায় রোদে শুকোতে দিন কাপড়টি। এরপর শুকনো কাপড়টি ধুয়ে ফেলুন। যদি এতে কাজ না হয় তবে, হলুদ এর দাগ স্থানে গ্লিসারিন লাগান। এক থেকে দুই ঘন্টা রেখে কাপড়টি পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন কাপড়ে হলুদের দাগ একদমই নেই।

চকলেট এর দাগ-

চকলেট খেতে খেতে কাপড়ে পড়ে যায় এবং দাগ লেগে যায়। এক্ষেত্রে কাপড়ে চকলেট এর দাগ স্থানে স্যানিটাইজার লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন। এরপর নিয়ম মতো ডিটারজেন্ট বা সাবান দিয়ে কাপড়টি ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চকলেট এর দাগ গায়েব হয়ে গেছে।

জুস এর দাগ-

ফলের রস বা জুসের দাগ কাপড়ে লাগলে সেটিতে ডিটারজেন্ট বা সাবান একদমই ব্যবহার করবেন না। এক্ষেত্রে কাপড়টি কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে তারপর গ্লিসারিন লাগিয়ে আবার সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। দাগ পুরোপুরি উঠে গেলে তারপর ডিটারজেন্ট বা সাবান ব্যবহার করতে পারবেন।

কাপড়ের রং ঠিক রাখবেন কিভাবে?


অনেক কাপড়েরই রং ওঠে। তাই কাপড় এর রং ঠিক রাখতে সমাধান স্বরূপ কিছু উপাদান রয়েছে। এই উপাদান গুলো সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে কাপড় এর রং দীর্ঘস্থায়ী হবে। নিম্নে কিছু উপাদান দেওয়া হলো:
  • লবণ
  • ভিনেগার
  • বেকিং সোডা
উপাদান গুলোর বিবরণ

লবণ-

এক বালতি পানিতে অর্ধেক কাপ লবণ মিশ্রিত করুন। এরপর সুতি কাপড় নতুন অবস্থায় সেই পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ রেখে আপনি আপনার মত কাপড়টি কেঁচে বা ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করলে কাপড়ের রং ছড়ায় না বা নষ্ট হয় না।

ভিনেগার-

কাপড় ধোয়ার জন্য যে ডিটারজেন্টটি ব্যবহার করবেন তার সাথে এক কাপ পরিমাণ ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এরপর কাপড়টি ওয়াশিং মেশিন বা হাতের সাহায্যে ধুতে পারেন। ভিনেগার ব্যবহার করার কারণটি হচ্ছে, ডিটারজেন্টের ক্ষতিকর প্রভাব যেনো কাপড়ে না পড়ে। এছাড়াও ভিনেগার কাপড়ের রং স্থায়ী করতে সাহায্য করে থাকে।

বেকিং সোডা-

কাপড় ধোয়ার জন্য যে পানিটি ব্যবহার করবেন তাতে অর্ধেক কাপ বেকিং সোডা মিশ্রিত করুন। তারপর নিঃসন্দেহে কাপড় পরিষ্কার করতে পারেন। বেকিং সোডা ব্যবহারের রং এর কোনো ক্ষতি হবে না বরং কাপড় এর উজ্জ্বলতা অধিক হরে বৃদ্ধি পাবে।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস


  • তীব্র রোদে কাপড় শুকাতে দিবেন না।
  • সব সময় কাপড় উল্টো করে শুকাতে দিবেন।
  • বেশি সময় ধরে কাপড় ডিটারজেন্ট এ ভিজিয়ে রাখবেন না।
  • স্যাঁতস্যতে দিনগুলোতে কাপড় ধোয়া থেকে বিরত থাকবেন।
  • ডিটারজেন্ট পানিতে ভালোভাবে গুলে তারপর কাপড় ভেজাবেন।
  • কাপড় ভেজানোর ক্ষেত্রে সাদা কাপড় আলাদা পাত্রে ভেজাবেন।
  • যেকোনো কাপড় পরিধান করার পর বাতাসে শুকিয়ে নিন নয়তো চিতি পড়ে যাবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দাগ মুক্ত ও নতুনের মত উজ্জ্বল কাপড় পরিধান করতে কে না চাই। তাই চলুন আমরা সকলেই উপরে টিপস গুলো অনুসরণ করে চলি।


পরিশেষে আমার প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলব যে, আশা করছি উপরে উল্লেখিত পোষ্টটি পড়ে আপনি আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন এবং আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন। পুরো পোষ্টের একটি লাইন হলেও আপনার কোনো না কোনো কাজে আসবে এই কামনা করি। পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামতটি জানিয়ে যাবেন। 

জিসান স্প্ল্যাশ অতি মনোযোগ সহকারে আপনাদের সুন্দর কমেন্ট গুলো পড়ে থাকে। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন